Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

যোগাযোগ ব্যবস্থা

গাইবান্ধা জেলায় জলপথ ও স্থলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

গাইবান্ধা জেলার নদী গুলির তীরেই গড়ে উঠেছিল আদিকালের জনবসতি, ব্যবসা কেন্দ্র, প্রশাসনিক কেন্দ্র, ভবানীগঞ্জ, কালগিঞ্জ, সুন্দরগঞ্জ, গোবিন্দগোঞ্জ, ঘোড়াঘাট, তুলশসীঘাট, গাইবান্ধা, বাদিয়াখালী, মহিমাগঞ্জ, সাহেবগঞ্জ ইত্যাদি। যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ছিল ছোট-বড় নৌকা, বজরা।

 

রংপুর এবং গাইবান্ধা উভয় শহরই ঘাঘট নদীর তীরে অবস্থিত। নৌকা ছিল যোগাযোগের মাধ্যম। ১৯০৭-০৮ সালে ঘাঘট বাগুড়িয়া খালের সংযোগ নিয়ে মানস হয়ে বহ্মপুত্র নদের সঙ্গে যুক্ত হলে ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। নদী পথেই গাইবান্ধার পাট নারায়ণগঞ্জ-ঢাকায় রপ্তানী হয়। মহাজনী মাল ঢাকা থেকে এবং নারিকেল নিয়ে বড় বড় নৌকা খুলনা-বরিশাল থেকে গাইবান্ধায় আসে। তিস্তা নদী রংপুর-হারাগাছ সুন্দরগঞ্জ হয়ে ঢাকা খুলনার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত। করতোয়া নদী আদিকালে পুন্ড্রবর্ধন (মহাস্থান) থেকে গোবিন্দগঞ্জ হয়ে ঘোড়াঘাট এর সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করত। ঘোড়াঘাট থেকে পাঠান শাসকরাও করতোয়া দিয়ে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত। জেলার অভ্যন্তরে ছোট ছোট নালা খাল দিয়ে বিভিন্ন বন্দর হাট, লোকালয়ে যাতায়াত করা যেত। রেল চালু হওয়ার আগে কলিকাতা ও আসামের সংযোগ গড়ে তুলেছিল। ‘‘রিভারস্কীম নেভিগেশন কোম্পানী ও ইন্ডিয়া জেনারেল স্কীম নেভিগেশন কোম্পানী’’ এর জাহাজ কলিকাতা থেকে আসাম যাতায়াত করত। ব্রহ্মপুত্র নদী তীর কালীগঞ্জে (ভবানীগঞ্জ থানা রংপুর জেলা) স্টীমার স্টেশন ছিল। তৎকালে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা এই ঘাট কেন্দ্রীক গড়ে উঠেছিল।

 

স্থলপথে যোগাযোগের মাধ্যম রাস্তা। জেলার চতুর্দিকে রাস্তা জালের মতো ছড়ানো বিছানো। পূর্বে পায়ে হেঁটে, গরু গাড়ি এবং ঘোড়া বা ঘোড়াগাড়ী যাতায়াত মাধ্যম ছিল। বর্তমানে রাস্তাগুলির যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে বহন হিসেবে আধুনিক বাস সার্ভিস, ট্রাকের ব্যবহার হচ্ছে। এই রাস্তা গুলির পাশেই গড়ে উঠেছে ব্যবসা কেন্দ্র, নগর সভ্যতা।

গাইবান্ধা জেলার সাবেক রাস্তাগুলি ছিল (১) ঘোড়াঘাট থেকে গোবিন্দগঞ্জ হয়ে ময়মনসিংহ দিয়ে ঢাকা (২))ঘোড়াঘাট থেকে কামদিয়া, রাজা বিরাট পানিতলা হাট কিচক হয়ে মহাস্থান (৩)ঘোড়াঘাট থেকে করতোয়া হয়ে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত একটি রাস্তা বা জাঙ্গাল বা বাধটির ধ্বংসাবশেষ কুপতলা রেল ষ্টেশনে মাইল দক্ষিণে (পশ্চিম-পূর্বে লম্বা) এখনো দেখা যায়। একটি রাস্তা ঘোড়াঘাট থেকে কোমড়পুর হাটের পূর্বে রামপুর পর্যন্ত ছিল। রামপুর বর্দ্ধনকুঠির রাজাদের সাবেক বাড়ি ও কাচারী ছিল যা বরিশাল মৌজার অন্তর্গত। সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, জুমারবাড়ি হয়ে একটি মহাসড়ক গাইবান্ধা জেলার বাদিয়াখালী, থানসিংহপুর স্পর্শ করে ভবানীগঞ্জ পর্যন্ত গিয়েছিল। এগুলির অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে আর নেই। বিভিন্ন রিপোর্টে ও আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থে এসবের সামান্য উল্লেখ রয়েছে।

 

সার্ভেয়ার জেনারেল জেম্স রেনেল ১৭৬৪-৭২ পর্যন্ত এতদঞ্চলে জরিপকালে অনেক প্রসিদ্ধ স্থানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ পথ দেখেছিল। সেগুলির মধ্যে রাজা নিলম্বরের রাস্তা হিসাবে পরিচিত ঘোড়াঘাট কুচবিহার রাস্তা ঘোড়াঘাট গোবিন্দগঞ্জ ময়মনসিংহ ঢাকা মহাসড়ক অন্যতম যা বর্তমান গাইবান্ধা জেলার উপর দিয়ে গিয়েছে। এছাড়াও রংপুর শিবগঞ্জ (বগুড়া) রাস্তা ও রংপুর কামদিয়া রাস্তার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন।

 

ঐ জরীপের একশত বছর পরে ১৮৭১-৭২ সালে ডাব্লিউ, ডাব্লিউ হান্টার এর বিবরণী থেকে জানা যায়- সাবেক রংপুর জেলার ২ টি প্রধানতম রাস্তা গাইবান্ধা জেলার উপর দিয়ে গিয়েছে। এগুলির একটি রংপুর পদহারা (বগুড়া) সড়ক ৩০ মাইল এবং রংপুর ভবানীগঞ্জ সড়ক ৪৫ মাইল দীর্ঘ। ভবানীগঞ্জ মহকুমা  সংলগ্ন কালীগঞ্জে স্টীমার স্টেশন থাকায় এবং এখান দিয়েই আসাম-কলিকাতা যাতায়াত পণ্য পরিবহণের সুযোগ থাকায় এই রাস্তাটির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। রাস্তা গুলিতে শালকাঠের সেতু ব্যবহার করা হত। এ. সি. হার্টলীর (১৯৩১-৩৮)ঃ সালের রিপোর্টে জানা যায় পুরাতন রাস্তা গুলির চিহ্ন অনেকক্ষেত্রে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তথাপি সাবেক রংপুর জেলার রাস্তাগুলির, যেগুলি গাইবান্ধাকে স্পর্শ করেছে। সেগুলি হচ্ছেঃ

১। রংপুর পীগাছা, বামনডাঙ্গা, নলডাঙ্গা, কামারপাড়া, গাইবান্ধা সড়ক। ২। রংপুর, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ, বগুড়া সড়ক। ৩। গাইবান্ধা, সাদুল্লাপুর, বড়দরগা, বদরগঞ্জ সড়ক। ৪। গাইবান্ধা, পলাশবাড়ি সড়ক। ৫। গোবিন্দগঞ্জ-মহিমাগঞ্জ সড়ক।

 

বর্তমানে বিশ্বরোড নামে খ্যাত জাতীয় মহাসড়কের পয়ত্রিশ মাইল রাস্তা সাদুল্লাপুর থানার ধাপেরহাট থেকে পলাশবাড়ি থানার উপর দিয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার শেষ সীমানা চাপরীগঞ্জ মাদ্রাসার পরে শেষ হয়েছে। সমগ্র গাইবান্ধা জেলার ১৯৩ কিঃ মিঃ পাকা সড়ক ১৩০ কিঃ মিঃ আধাপাকা এবং ২৩০৪ কিঃ মিঃ কাঁচা রাস্তা আছে। ৩৬৫ টি সেতু ১২৮১ টি কালভার্ট রয়েছে।

 

১৮৭৫ সালে নর্দাণ বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে নামে একটি কোম্পানী উত্তরবঙ্গে প্রথম রেলওয়ে চালু করে। ১৯০০ সালের পূর্বে একটি মিটারগেজ রেলপথ পার্বতীপুর থেকে রংপুর কাউনিয়া ধুবরী পর্যন্ত এবং সন্তাহার থেকে বগুড়া বোনারপাড়া থেকে ফুলছড়ি ঘাট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। ১৯০৭-০৯ সালে বোনারপাড়া থেকে কাউনিয় পর্যন্ত রেলপথ যুক্ত হয়। গাইবান্ধা জেলার রেলস্টেশনগুলি হচ্ছেঃ বামনডাঙ্গা, নলডাঙ্গা, কামারপাড়া, কুপতলা, গাইবান্ধা, ত্রিমোহিনী, বালাসীঘাট রেলওয়ে ফেরী স্টেশন, বাদিয়াখালী, বোনারপাড়া জংশন, মহিমাগঞ্জ, ভরতখালী, ফুলছড়ি, তিস্তামুখ ঘাট রেলওয়ে স্টেশন। এই জেলায় রেলপথের মোট দূরত্ব প্রায় ৫২ মাইল। সাবেক দিনাজপুর রংপুর জেলা সহ রেলপথের ঢাকার সঙ্গে উত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।